রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রধানত কৃষি ও বনজ সম্পদ নির্ভর। কিছুদিন আগেও এখানে জুম চাষই অর্থনীতির একমাত্র নিয়ন্ত্রক ছিল। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে মোঘলদের সাথে যে বাণিজ্য গড়ে উঠে তাতেও ব্যতিক্রম কিছু ছিলনা। মোঘলরা এতদঞ্চল থেকে মুদ্রা বা বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়ে প্রধানত কার্পাস বা তুলা সংগ্রহ করতো। সে কারণে এ অঞ্চলটি এক সময় ‘কার্পাস মহাল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে এ জেলার অর্থনৈতিক কমকান্ডের প্রধান উপাদান হচ্ছে বনজ সম্পদ। বন ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠার প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শিল্পোদ্যোক্তা না থাকায় এতদঞ্চলে কোন ভারী শিল্প গড়ে উঠেনি। এখানে যে সব শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলোঃ-
কর্ণফুলী পেপার মিলসঃ
১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠিত এ মিলটি এশিয়ার বৃহত্তম কাগজের কল হিসেবে পরিচিত। এ মিলটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৬৭.৫৭ মিলিয়ন রুপী। এ মিলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার টন। মিলটি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে জাতীয়করণ করা হয়। এ মিলের প্রধান কাঁচামাল বাঁশ। তবে বর্তমানে বাঁশের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় বন বিভাগ কর্তৃক বনায়নকৃত পাল্পউডও ব্যবহৃত হচ্ছে। এ মিলে দু’টি মেশিনে সাদা কাগজ ও একটিতে রঙিন কাগজ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এছাড়া সার্টিফিকেট, ডুপ্লিকেটিং, সিমপ্লেক্স, এজুর লেইড ও টাইপ রাইটিং মেনিফোল্ড জাতীয় কাগজ, করোগেটেড বোর্ড, করোগেটেড কার্টুন, বিটুমিন পেপার, গাম টেপ এবং ওয়াক্স কোটেড পেপারও এখানে উৎপাদিত হয়।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ
এটি বাংলাদেশে পানিশক্তি দ্বারা চালিত একমাত্র বিদ্যুৎ স্থাপনা। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে এটি কাপ্তাই উপজেলায় স্থাপিত হয়। বর্তমানে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট। বার্ষিক গড় উৎপাদনের পরিমাণ ৫০ কোটি কিলোওয়াট ঘন্টা।
রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলসঃ
এটি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ায় অবস্থিত। এখানে কার্পাস থেকে সুতা উৎপাদন করা হয়। এটি এখন রুগ্ন শিল্প-কারখানা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বেইন শিল্পঃ
এটি একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মেয়েরা নিজেরাই ঘরে বসে এক ধরণের কোমর তাঁতে নিজেদের কাপড় তৈরি করে। তাদের বুনন শিল্পে এক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় যা প্রশংসার দাবিদার। নিকট অতীতে এ ‘বেইন শিল্প’ শুধু পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে এ শিল্প আয়ের উৎস হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে এবং জীবিকার তাগিদে অনেকেই বেইনের মাধ্যমে উৎপাদিত কাপড় বিপণন করছে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এ শিল্প এতদঞ্চলের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।
বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্পঃ
বাঁশ ও বেতের কাজ একদঞ্চলের অন্যতম শিল্প। এখানকার গ্রামীণ জীবনে কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও পারিবারিক কাজে ব্যবহারের জন্য উপজাতীয় পুরুষরা ঘরে বসে নানা সামগ্রি নিজেরাই তৈরি করেন। এসব সামগ্রির মধ্যে কাল্লোং, বারেং, পুল্লেং, ডুল, কুলা, ডুলা, লেই, তলই, সেরি, তেরা চেই, বিজন, খারাং, মারাল্লে, দোলনা, সাম্মো ইত্যাদি অন্যতম। এসব তৈরির জন্য উপকরণ বেত ও বাঁশ বেশ সহজলভ্য। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সামগ্রি গৃহস্থালীর প্রয়োজনে তৈরি করা হতো। অবশ্য বর্তমানে বেতের সাহায্যে মোড়া, সোফা, সেল্ফ ইত্যাদিও তৈরি করা হচ্ছে। বাজারে এসবের চাহিদাও রয়েছে।
হাতির দাঁত শিল্পঃ
রাঙ্গামাটি জেলার আরেকটি উল্লেখযোগ্য শিল্প হচ্ছে হাতির দাঁতের অলংকার ও কারুপণ্য। এ শিল্প কারিগরি মানে খুবই উৎকর্ষতা লাভ করেছে। তবে হাতির দাঁত সহজলভ্য না হওয়ায় এ শিল্প প্রসার লাভ করতে পারছে না। এ শিল্প মুলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমিত রয়েছে। তাদের মধ্যে কল্পতরু চাকমার পরিবার অগ্রগন্য। তাঁর প্রপৌত্র বিজয় কেতন চাকমা এখনো এ শিল্পকে সযতনে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস